আজ, রবিবার | ৫ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | বিকাল ৪:৫৮

ব্রেকিং নিউজ :
মাগুরায় রানাকে সমর্থন দিয়ে নির্বাচন ছাড়লেন ভিপি জাহাঙ্গীর শ্রীপুরে উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী রাজন-সংগ্রামের কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষ জমে উঠেছে শ্রীপুর উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচন মাগুরায় জাতীয় আইনগত সহায়তা দিবস উদযাপন বৃষ্টির প্রার্থনায় নামাজ পড়ে কাঁদলেন শ্রীপুরের মুসল্লিরা মহম্মদপুরে সড়ক দূর্ঘটনায় শিক্ষকের মৃত্যু মাগুরায় প্রথম ধাপের উপজেলা নির্বাচনের প্রার্থীদের প্রতীক বরাদ্দ মাগুরায় নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ালেন জাহিদুর রেজা চন্দন ও নবীব আলী মহম্মদপুরে চেয়ারম্যান পদে ৯ জন শালিখায় ৫ জনের মনোনয়ন পত্র জমা স্মৃতির আয়নায় প্রিয় শিক্ষক কাজী ফয়জুর রহমান

নতুন করে চেনা সেই মাগুরা কলেজের বন্ধুদের

অনন্যা হক : কলেজ ক্যাম্পাস থেকে বেরিয়ে ঊনচল্লিশ বছর পর গাজীপুর সারা রিসোর্টে নতুন করে চেনা।

শ্যাওলা ধরা, চুন বালি খসে পড়া, পুরোনো ইটের দেয়াল ঘেরা এবড়োখেবড়ো মেঝের এক কমন রুম। মনে হয় শত বর্ষের পুরোনো ছিল। এটা ছিল আমার ছোট মফস্বল শহরের সেই প্রিয় মাগুরা কলেজ ক্যাম্পাসের কমনরুম। খুব করে মনে পড়ে, সেই কলেজের কথা। অনেক বড় মাঠ, বিশাল শান বাঁধানো ঘাটের পুকুর, পুকুর ঘিরে নারিকেল গাছের সারি। আরও আছে অনেক বড় বড় গাছ, দাঁড়িয়ে আছে কালের সাক্ষী হয়ে।

কেবলই স্কুলের গন্ডি পেরিয়ে কলেজে পদার্পণ। এক দারুণ শিহরণ মনে। এই প্রথম ছেলেদের সাথে যৌথ লেখাপড়া। সকালে উঠে মন অপেক্ষায় থাকতো কখন সময় হবে কলেজে যাওয়ার।বাড়ির পাশেই কলেজ। বাসা থেকেই কলেজের ঘন্টাধ্বনি শুনতে পেতাম।একটা রাস্তা পার হয়েই কলেজের পেছনের ছোট্ট গেট দিয়ে ঢুকে সোজা গিয়েই আমাদের কমনরুম।

ক্যাম্পাসের মাঠে, প্রান্তরে,পথে,করিডোরে, ক্লাসে পড়েছে অগণিত শিক্ষার্থীর পদধূলি।যেখানে ছিলাম আমি, ছিলে তুমি এবং তোমরা। বিশাল মনোরম পুকুরের একেবারে পাড় ঘেঁষে ছিল কমনরুম।সেই রুমটাতে ছিল একটা অনাদরে পড়ে থাকা কাঠের নড়বড়ে টেবিল। ঠিক বড় মাঠটার দিকে একটা জং ধরা রডের শিক ও রং উঠে যাওয়া কাঠের পাল্লার জানালা ছিল।

ক্লাসের অবসরে, ঐ টেবিলে পা ঝুলিয়ে বসে থাকতাম ঠিক জানালার কাছে। পুকুরের পাশে নারিকেল গাছের সারি দেওয়া সাদা মাটির পথ।
ঐ পথে আসা যাওয়া করতো, অগণিত যুবক। যাদের চোখ থাকতো মেয়েদের কমনরুমের দিকে। অনেক রকম স্বভাবের যুবক যুবতির সমাগমে মুখরিত হতো কলেজ ক্যাম্পাস। কেও সাহসী বেপরোয়া, কেউ দুষ্টু, কেউবা বোকা, সহজ সরল নিরীহ টাইপ।

মেয়েদের সামনে এসে দাঁড়িয়ে কথা বলার মতো সাহসী যুবক খুব কমই দেখা যেত। ক্যাম্পাসে ছেলে মেয়ে মেলা মেশা একেবারে বারণ ছিল। টিচারকে দেখে ছেলে মেয়েরা কমনরুম থেকে বের হয়ে, টিচারের পেছনে পেছনে যাবে আর ক্লাস শেষে ফিরে আসবে, এটাই ছিল ধরা বাঁধা নিয়ম।

আমরা এভাবে মাঠের শেষ প্রান্তে সাইন্স বিল্ডিং এ ক্লাস করতে যেতাম। একেবারে নীরব পরিবেশে ক্লাস হতো। কোন ছেলে বন্ধুর সাথে কথা না বলে আমরা চলে আসতাম। এক মিনিটও দাঁড়ানো যাবে না। শুধু ক্লাসের ফাঁকে এর ওর ঘাড়,মাথার পাশ কাটিয়ে যতটুকু মুখ চেনা বা দৃষ্টি বিনিময় হোত।এ এক অদ্ভুত রোমাঞ্চকর অনুভূতি ছিল আমাদের কাছে।

স্যারের পেছনে কমনরুমে ফিরতে ফিরতে, টুকটাক টিপ্পনী, তির্যক কথা,মন ভোলানো কথা শুনেছি কত। ভাল লাগেনি বলবো না।তখন সবই অহেতুক, অকারণেই ভাল লাগতো। ওরা যেন আমাদের উচ্ছ্বলতাকে উস্কে দিয়ে মজা পেত।

কমনরুমে ফিরে এসেই বন্ধুদের হাসি, আড্ডার জোয়ার উঠতো। ক্লাসের কোন টিচার কেমন করে কথা বলে, কোন ছেলেটা ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে থাকে, কোন ছেলেটা ফাজিল, কে বোকা, কে কেমন করে হাঁটে, বেঞ্চে প্লাস, মাইনাস সংকেত, অঙ্কের থিওরি দিয়ে কি সব লেখা থাকে, সবই আড্ডার বিষয় ছিল।

মাঝে মাঝে কিছু অতি উত্সাহী, সাহসী যুবক ছিটকে, কোন এক টানে কমনরুমে বারান্দার কাছে এসে এর ওর সাথে অল্প স্বল্প কথা বলে চলে যেত।তেমন কিছু না, হয়তো ছোটখাটো বাক্যালাপ, তাই মনে হতো, কি জানি কি হচ্ছে তাদের মাঝে।
শুধু টেবিলে পা ঝুলিয়ে বসে দেখতাম। কখনও কথা হোত ভেতরে বসে খুব ক্ষনিকের জন্য চোখে চোখে। এ পর্যন্তই।
কমনরুমের বারান্দায় এসে পর্যন্ত দাঁড়াতে পারিনি কখনো, যদি দেখে ফেলেন বাবা।

বাবা ছিলেন ঐ কলেজের ইংরেজীর শিক্ষক, যিনি নিরো প্রফেসর হিসেব খ্যাত ছিলেন।

প্রচন্ড রাগী, রাশভারী স্বভাবের বাবা কলেজে থাকায় যা মনের আনাচেও আসেনি কখনও। মনে পড়ে না কলেজ ক্যাম্পাসে কারো সাথে কথা বলেছি কোনদিন। কিন্তু নিজের চোখের অভিভাবক তো ছিলাম নিজে একা, সেখানে কোন পর্দা কেউ টানাতে পারেনি। তাই আসা যাওয়ার পথে আর টেবিলে পা ঝুলিয়ে জানালা দিয়ে যুবক দেখেছি, রকমারি যুবক। কখনও চোখে চোখে ভাষা হীন,নিঃশব্দ কথা হয়েছে। তবে তখনও কেউ মনে দাগ কাটেনি, ছিলাম ধরা ছোঁয়ার বাইরে নিজের মনের দিক থেকেই। ঐ চোখেই হোত অনিচ্ছা, অনীহা, প্রত্যাখানের কথা।
রক্ষণশীলতার আলাদা একটা মজা আছে কিন্তু।আমার মনে হয়, যেখানে অনুভব থাকে অনেক গভীরে, শুধু ধরা ছোঁয়ার বাইরে বলে আকর্ষণ থাকে তীব্র!
যাকে বলে উঠতি বয়সের যুবক যুবতীদের সাধারণ  এক মোহ বা ঘোর!
সেই সাবাভাবিক ঘোরের ভেতরে থেকেই পার করে এসেছিলাম কলেজ জীবন আজ উনচল্লিশ বছর পর আবার আমরা একত্রিত হলাম আমাদের কয়েক গনের আন্তরিক ঐকান্তিক ইচ্ছেতে। তখন এদের বলতে গেলে প্রায় কারো সাথেই কথা  বলার সম্পর্ক তো ছিলই না, অনেককে তো চিনতামই
না।এখন নেই কোন রক্ষণশীলতার বাঁধা। হলো নতুন করে চেনা অনেককেই।এক সময় দু বছর এক সাথে পড়েও এদেরকে চিনতাম না,কথা বলিনি কখনও শুধু পরিবেশের কারণে, আজ এটা ভাবতে খুবই অবাক হবার মতোই। তাই তো মিলনমেলার ভাল লাগাটা ছিল সত্যি একটু অন্যরকম। যেন নতুন করে চেনা।
অনন্যা হক: কবি, লেখিকা

শেয়ার করুন...




©All rights reserved Magura Protidin. 2018-2022
IT & Technical Support : BS Technology